SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - আমাদের সম্পদ | NCTB BOOK

তোমরা বলতো, সব জায়গার মাটি কি এক রকম? না, একেক জায়গার মাটি একেক রকম। মাটির গঠন, বর্ণ, পানি ধারণক্ষমতা— এসব বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে মাটিকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো বালু মাটি, পলি মাটি, কাদামাটি এবং দো-আঁশ মাটি। এবার আমরা বিভিন্ন প্রকার মাটির বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে নিই।
বালু মাটি
বালু মাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যে এদের পানি ধারণক্ষমতা খুবই কম। এটি তোমরা নিজেরাই পরীক্ষা করে দেখতে পারবে।
একক কাজ
কাজ:
অল্প পরিমাণ বালু মাটি নিয়ে তাতে একটু পানি দাও। এবার হাতের তালুতে নিয়ে এই বালু মাটি দিয়ে গোল গোল ছোট মাটির বলের মতো বানাতে পার কি না দেখ। পারবে না, কারণ বাজুতে মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা নেই বলে পানি যোগ করলেও বালু মাটি তা শোষণ করতে পারে না। যদি পারত তাহলে পানি মাটির কণার গায়ে লেগে থাকত আর তোমরা খুব সহজেই বলের মতো মাটির গুটি বানাতে পারতে।বালু মাটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো যে এতে বিদ্যমান মাটির কণার আকার সবচেয়ে বড়, যার ফলে কণাগুলোর মাঝে ফাঁকা জায়গা অনেক বেশি থাকে, তাই অনেক বেশি বায়বায়ন হয়। বালু মাটি তোমরা হাতে নিলে দেখবে যে এরা দানাযুক্ত। বালু মাটিতে খুব ছোট ছোট শিলা আর খনিজ পদার্থও থাকে। বালু মাটিতে হিউমাস থাকলে এটি চাষাবাদের জন্য সহজসাধ্য, কিন্তু যেহেতু এই মাটির পানি ধারণক্ষমতা কম, তাই পানি দিলে তা দ্রুত নিষ্কাষিত হয়ে যায় এবং গ্রীষ্মকালে, বিশেষ করে উদ্ভিদে পানির স্বল্পতাদেখা যায়। তাই যে সকল ফসলাদিতে অনেক বেশি পানি লাগে, সেগুলো বালু মাটিতে ভালো হয় না। তবে যখন প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়, যার কারণে জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, সে সকল ক্ষেত্রে বালু মাটি চাষাবাদের জন্য উপযোগী হয়ে উঠতে পারে। কারণ, বালু মাটিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না, যার ফলে গাছের শিকড় পঁচে না। জলাবদ্ধতার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যে এতে গাছের শিকড়ে পঁচন ধরে, যার ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়।
 

পলি মাটি
পলি মাটির পানি ধারণক্ষমতা বালু মাটির চেয়ে বেশি। পলি মাটি চেনার উপায় কী? সামান্য পানিযুক্ত মাটি নিয়ে আঙুল দিয়ে ঘষলে যদি মসৃণ অনুভূত হয়, তাহলে বুঝতে হবে এটি পলি মাটি। পলি মাটিতে উপস্থিত পানির জন্য এটি হাতের সাথে লেগে থাকবে, যা বালু মাটির বেলায় ঘটে না। পলি মাটি খুবই উর্বর হয় আর মাটির কণাগুলো বালু মাটির কণার তুলনায় আকারেও ছোট হয়। জমিতে পলি পড়ার কথা তোমরা সবাই জান। পলি মাটির কণাগুলো ছোট হওয়ায় এরা পানিতে ভাসমান আকারে থাকে এবং একপর্যায়ে পানির নিচে থাকা জমিতে পলির আকারে জমা পড়ে। পলি মাটিতে জৈব পদার্থ ও খনিজ পদার্থ (যেমন: কোয়ার্টজ) থাকে। বালু মাটির মতো পলি মাটির কণাগুলোও দানাদার হয় এবং এতে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান বেশি থাকে  

কাদা মাটি
তোমরা কাদা মাটি দেখেছ? এই মাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এরা প্রচুর পানি ধারণ করতে পারে। এরা অনেকটা আঠালো ধরনের হয় এবং হাত দিয়ে ধরলে হাতে লেগে থাকে। এই মাটিতে মাটির কণাগুলো খুব সূক্ষ্ম হয়, ফলে কণাগুলোর মধ্যকার রন্ধ্র খুব ছোট আর সরু হয়। কাদা মাটি থেকে সহজে পানি নিষ্কাশিত হয় না। এই জাতীয় মাটিতে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তাই ফসলাদি বা উদ্ভিদের মূলে পচন সৃষ্টি করে। কাদা মাটিতে ফসল চাষের জন্য জৈব সার দেওয়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে থাকে। এই মাটিতে খনিজ পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই মাটি দিয়ে ঘর সাজানোর তৈজসপত্র, এমনকি গহনাও তৈরি করা হয়।
 

দো-আঁশ মাটি
এই মাটি বালু, পলি আর কাদা মাটির সমন্বয়েই তৈরি হয়। দো-আঁশ মাটিতে থাকা বালু, পলি আর কাদা মাটির অনুপাতের উপর নির্ভর করে দো-আঁশ মাটির ধরন কেমন হবে। দো-আঁশ মাটির একদিকে যেমন পানি ধারণক্ষমতা ভালো আবার প্রয়োজনের সময় পানি দ্রুত নিষ্কাশনও হতে পারে। তাই ফসল চাষাবাদের জন্য দো-আঁশ মাটি খুবই উপযোগী।
উপরে উল্লেখিত চার প্রকার ছাড়াও আরো দুই প্রকারের মাটি পাওয়া যায়। একটি হলো পিটি মাটি (Peaty Soil), অন্যটি খড়িমাটি (Chalky Soil)। পিটি মাটি তৈরি হয় মূলত জৈব পদার্থ থেকে; আর সে কারণে এতে অন্য সব মাটি থেকে জৈব পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। সাধারণত ডোবা আর আর্দ্র এলাকায় এই মাটি পাওয়া যায়। এই মাটিতে পুষ্টিকর উপাদান কম থাকে, তাই ফসল উৎপাদনের জন্য এটি তেমন উপযোগী নয়। অন্যদিকে খড়িমাটি ক্ষারীয় হয় এবং এতে অনেক পাথর থাকে। এই মাটি সাধারণত দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং সে কারণে ফসল উৎপাদনের জন্য খুব একটা উপযোগী নয় বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে। এছাড়া খড়িমাটিতে গাছপালার জন্য অত্যাবশ্যকীয় আয়রন আর ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহে ঘাটতি থাকে।

 

Content added By